নৈহাটি আরবিসি কলেজ চলো কর্মসূচিতে বিশাল ছাত্র বিক্ষোভ — দুর্নীতি ও দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে সরব এসএফআই
“দুর্নীতি-মুক্ত, দুষ্কৃতি-মুক্ত, বহিরাগত-মুক্ত কলেজ চাই”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে এসএফআই উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটির ডাকে ৮ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে আজ নৈহাটি আরবিসি কলেজ চলো কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি প্রতীকউর রহমান, সহ জেলা ও স্থানীয় নেতৃত্ব।
এসএফআই-এর ডাকে আজকের কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর জমায়েত ঘটে। সকাল থেকেই কলেজ চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ডেপুটেশন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত এসএফআই নেতৃত্ব কলেজে প্রবেশ করতে গেলে, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমেই জানিয়ে দেয় যে তাঁরা ডেপুটেশন গ্রহণ করবেন না। প্রিন্সিপালের এই অস্বীকার ছাত্রসমাজের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
গভর্নিং বডির অপপ্রভাব ও প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে রয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি। তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশেই কলেজে নিয়োগ হয়েছে খুনের মামলায় অভিযুক্ত সহ একাধিক অপরাধীর, এমন অভিযোগও তুলেছে এসএফআই। দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ছাত্র সংসদ বা ইউনিয়ন নেই, অথচ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ইউনিয়ন ফি আদায় করা হচ্ছে—এই অবৈধ অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
ডেপুটেশন না নেওয়ার চক্রান্ত ব্যর্থ
প্রথমে প্রিন্সিপাল জানান, তিনি ডেপুটেশন নেবেন না, নিলেও তা হবে সন্ধ্যা ৫টার পর, যখন ছাত্রছাত্রীদের ভিড় কমে যাবে। এই ধরণের ‘চুপিচুপি ডেপুটেশন’ নেওয়ার প্রস্তাবে এসএফআই এক কথায় জানিয়ে দেয়—“ডেপুটেশন তো দেবই, আপনারাও থাকবেন, আমরাও থাকব, দরকার হলে সারারাত থাকব”। এরপর কলেজের গেট আংশিক অবরুদ্ধ করা হয় যাতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেরোতে না পারেন।
ছাত্রছাত্রীদের ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ শেষে জানায়, মাত্র ২ জন প্রতিনিধি ডেপুটেশন দিতে পারবে। এসএফআই স্পষ্ট জানায়, “কে যাবে তা এসএফআই নির্ধারণ করবে, কর্তৃপক্ষ নয়।” আমাদের পক্ষ থেকে ২ জন ছাত্র ও ৩ জন নেতৃত্ব মিলে মোট ৫ জনের প্রতিনিধি দল গঠিত হয়। প্রথমে নানা নাটক ও টালবাহানা চললেও, ছাত্র আন্দোলনের ঐক্য ও অদম্য জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। শেষপর্যন্ত কলেজ প্রিন্সিপাল ডেপুটেশন গ্রহণ করেন।
৮ দফা দাবি ও সতর্কবার্তা
ডেপুটেশনে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যে দাবিগুলি উত্থাপন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো—
- অবিলম্বে অবৈধ ইউনিয়ন ফি আদায় বন্ধ করতে হবে
- দুষ্কৃতি ও বহিরাগতদের কলেজ চত্বর থেকে বিতাড়িত করতে হবে
- ছাত্র স্বার্থে স্বচ্ছ নিয়োগ ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে
- ছাত্র সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে
এসএফআই স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দেয়, এই দাবিগুলি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
আন্দোলন পরবর্তী ছাত্র সভা
ডেপুটেশন প্রদান শেষে কলেজ চত্বরে এক বিশাল ছাত্রসভা আয়োজিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, প্রাক্তন সভাপতি প্রতীকউর রহমান সহ অন্যান্য ছাত্রনেতারা। তাঁরা বলেন,
“এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণের জন্য নয়—এটা ছাত্রসমাজের অধিকার রক্ষার জন্য। আমরা চাই স্বচ্ছ, সুরক্ষিত ও দুষ্কৃতি-মুক্ত কলেজ।”